গ্রামে আবদুল গফুর শাহ নামে এক কৃষক ছিলেন। কৃষিকাজ ও গরু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। গফুর শাহ প্রতিদিন গরুগুলোকে নিয়ে যেতেন বাড়ির পাশে পাহাড়ে। প্রতিদিস সকালে পাহাড়ে গরু নিয়ে যেতেন সন্ধ্যায় আবার বাড়িতে নিয়ে আসতেন। কখনো এ নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি।
একদিন তার একটি গাভির বাছুর ফিরে আসেনি। পাগলের মতো সেটি খুঁজতে শুরু করলো গফুর শাহ কিন্তু বাছুরটি পাওয়া যাচ্ছিল না। গফুর শাহ কিন্তু প্রতিদিনই বাছুরের সন্ধানে পাহাড়ে যেতেন। অনেক খোজাখুজির পর এভাবে ১০ দিন পার হয়ে গেল। হঠাৎ একদিন গভীর জঙ্গল থেকে ডেকে উঠল বাছুরটি। যেখান থেকে বাছুরটির আওয়াজ শুনা জাচ্ছিল সেখানে যাওয়া ছিল অনেক কঠিন। কিন্তু বাছুরের সন্ধানে জঙ্গল পরিষ্কার করতে শুরু করলেন গফুর শাহ। এভাবে দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় জঙ্গলের ভেতরে এক স্থানে গিয়ে বাছুরটির সন্ধান পেলেন। সেখানে বাছুরের সঙ্গে আরেকটি জায়গা দেখে বিস্মিত হলেন তিনি।
এদিকে বাছুর নিয়ে আবদুল গফুর যখনি বাড়িতে ফিরে আসার জন্য পা বাড়ায় ঠিক তখনি জঙ্গলের গভীর থেকে ‘গফুর এখানে নামাজ আদায় কর’ বলে একটি গায়েবি আওয়াজ ভেসে আসে। থমকে দাঁড়ায় আবদুল গফুর। এরপর সেই গায়েবি আদেশ অনুযায়ী সেই স্থানে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরে যান তিনি। বাঘ-ভালুকের ভয়ে মানুষ সেদিকে পা না বাড়ালেও আবদুল গফুর দিনে এমনকি গভীর রাতেও নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকেন সেই স্থানে। বাঁশের বেড়ার সাহায্যে নিজে নিজে তৈরি করেন নামাজ পড়ার একটি ছোট ঘর। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো কেউ না থাকলেও এই মসজিদ থেকে গায়েবিভাবে প্রতিদিন আজানের সুর শুনা যেত!
এ পাহাড় থেকে ওই সময় জনবসতি ছিল অনেক দূরে। কিন্তু আজানের শব্দ শুনা যেত প্রতিনিয়ত। ধীরে ধীরে এই গায়েবি আজানের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীরাও কৌতূহলী হয়ে সেখানে যেতে শুরু করলো।
ধীরে-ধীরে দুনিয়াবি কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনায় মন দেন গফুর শাহ। পেয়ে যান আধ্যাত্মিক ক্ষমতাও। তখন থেকে আবদুল গফুরকে মানুষ সম্মানসূচক ‘আউলিয়া গফুর শাহ (রহ.)’ বলে সম্বোধন করতে থাকেন।
বলছিলাম প্রায় ২০০ বছরেরও পুরানো সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের পাহাড় সংলগ্ন কলাবাড়িয়া গ্রামের ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন গফুর শাহ গায়েবি মসজিদের ইতিহাস।
জনবসতি থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এ মসজিদ থেকে এখনো মানুষ গায়েবি আজানের আওয়াজ শুনতে পান। দূর-দূরান্ত থেকে মুসলমান ছাড়াও হিন্দু-বৌদ্ধসহ নানান ধর্মের মানুষ এই মসজিদে আসেন তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য।
মানুষের বিশ্বাস, এখানে আসলে যেকোনো মনোবাসনা পূরণ হয়। এভাবে ছড়িয়ে পড়লো গফুর শাহ গায়েবি মসজিদের নাম। চারদিকে ব্যাপক নাম ছড়িয়ে পড়ার পর একদিন রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেলেন গফুর শাহ। বহু খুঁজেও তার সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। অনেকে মনে করেন তিনি উধাও হয়ে গেলেও তার দোয়া এখানে সবসময় আছে। প্রতিদিন এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসে জিয়ারত করেন। অনেকে মানত করে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দিয়ে যান মসজিদ কর্তৃপক্ষকে। তবে জুমার দিন হাজার হাজার মুসল্লি বিভিন্ন জেলা থেকে নামাজ ও জিয়ারত করতে ভিড় জামান।
বর্তমানে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এই মসজিদটি বড় পরিসরে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করে নিমার্ণ করা হয়েছে।